।। জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, রাজশাহী ।।
ষাটোর্ধ্ব নাসের আলি তানোরের লালপুর এসেছেন নাটোর থেকে। ৭০ কিলোমিটার দূর থেকে আসার উদ্দেশ্য আলুক্ষেতে আছড়ে পড়া বিমানটি নিজ চোখে দেখা।
৪০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছেন আবু বকর। গতকাল তার ছেলে সায়েম টিভিতে দেখেছিল ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটি। তারপর থেকেই আবদার। ছেলের সেই বায়না পূরণে আবু বকর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন তানোরের আলুর মাঠে।
দূরদূরান্তের এমন দর্শনার্থীর পাশাপাশি আশেপাশের ইউনিয়নের কৌতূহলী মানুষের পদচারণায় মুখর লালপুর ও ঘটনাস্থল আলুর মাঠ।
আরও পড়ুন: আলুর ক্ষেতে উল্টে যাওয়া বিমান ঘিরে মেলার আমেজ
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার পর থেকেই এই ভিড়ের শুরু। দূর-দূরান্ত থেকে আসা কৌতূহলী মানুষ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বিমানকে ঘিরে। কেউ যাচ্ছে তো কেউ আসছে। মানুষের ভীড় লেগে থাকায় বসেছে ঝাল মুড়ির দোকান। আর এই কৌতূহলী মানুষ আসা-যাওয়ায় চিঁড়েচ্যাপ্টা আবস্থা আলুচাষিদের।
আলুচাষিরা জানান, যে স্থানটিতে বিমান আছড়ে পড়েছে সেই জমিটির ইজারা নিয়েছেন নুরুল ইসলাম। মোহনপুর থানার মৌগাছি গ্রামের নুরুল ইসলাম বিমানের আশেপাশের ১৮০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে আলু চাষ করছেন।
তার দাবি, মানুষের আসা-যাওয়ায় পায়ের চাপে অন্তত ২৫ বিঘা জমির আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিঘা প্রতি ৪৩ হাজার টাকা উৎপাদন ব্যয় হিসেব করলে ক্ষতি প্রায় ১০ লাখ টাকা।
নুরুল ইসলামের আলু চাষ প্রকল্প দেখভাল করেন সাইফুল ইসলাম। সকাল থেকেই তার তোড়জোড় মানুষ নিয়ন্ত্রণে। সাইফুল ইসলাম জানান মানুষের পায়ের চাপে আলুর উপরিভাগে বা ত্বকে কালশিটে দাগ পড়েছে। এসব কোল্ডস্টোরে সংরক্ষণের জন্য নেয়া হলে পচন ধরবে। এই আলু বিক্রি বা সংরক্ষণ কোনটাই হবে না। পুরোটাই ক্ষতি। তার দাবি, অন্তত ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হলো তাদের।
নুরুল ইসলামের আলু প্রজেক্টে প্রতিদিন আলু তুলতে দেড়শ শ্রমিক কাজ করছেন। বিমান আছড়ে পড়ার পর থেকে শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। অনেকেই অলস সময় পার করছেন। এসব নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেয় সাইফুল ইসলামের। তিনি বলেন, ”বিমান আছড়ে পড়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু আলুর যে ক্ষতি হলো তার কী তদন্ত হবে? যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতিপূরণ কে দেবে?”