
অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার ঘোষণা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ।। গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তার দাবি, ‘দুর্নীতিবাজ চক্রের ষড়যন্ত্রে’ এই ঘটনা
।। রাজু আহমেদ, রাজশাহী ।।
রাজশাহী সদরের ৪ নম্বর খাদ্যগুদামে ক্রয়কৃত চালের ৪ শতাংশ সরকারি গুদামে স্থান পাবার অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তিনি এঘটনাকে ‘অনিয়ম’ হিসেবে চিহ্নিত করে জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গুদামটিতে এবার ৫৪৯ মেট্রিকটন নতুন চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় শাহমখদুম রাইস মিল। সোমবার পর্যন্ত ১৫৮ মেট্রিকটন সরবরাহও করে তারা। কিন্তু সরবরাহকৃত বস্তায় নিয়মানুযায়ী স্টেনসিল ছাড়াই সেগুলো গুদামে প্রবেশ করানো হয়।
একই দিনে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে গুদামে ‘নিম্নমানের’ চাল সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। এর সূত্র ধরে সেদিন দুপুরে ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভূঁইয়ার উপস্থিতিতে গুদামটি সিলগালা করা হয়। মঙ্গলবার তালা খুলে তার নেতৃত্বে শুরু হয় তদন্ত।
বেলা পৌনে ১২টা থেকে দুপুর তিনটা অবধি গুদামের ভেতর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তদন্ত দল। এরপর ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, ওই গুদামে সরবরাহকৃত চালের মধ্যে ৪ শতাংশ গুদামে স্থান পাবার উপযুক্ত নয়।
নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, “আমরা সময় বাঁচাতে নমুনায়নের মাধ্যমে কাজটি করেছি। সেক্ষেত্রে আমরা পেয়েছি ৪ শতাংশ চাল আমাদের বিনির্দেশ মেনে সরবরাহ করা হয়নি। ওখানে প্রায় চার হাজার বস্তা রয়েছে। হিসেব করলে এর মধ্যে প্রায় ১৬০টি বস্তার চালে বিনির্দেশ মানা হয়নি।”
অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি গুদামে ক্রয়কৃত চালে আর্দ্রতা, দানা, মিশ্রণ ও বিজাতীয় পদার্থসহ ১২টি বিনির্দেশের আওতায় সুনির্দিষ্ট উপযোগিতার মাত্রা নির্ধারণ করা আছে। এই ৪ শতাংশ চালে সেই মাত্রা যথাযথভাবে নেই বলে জানান খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
এছাড়া স্টেনসিল ছাড়াই গুদামে ক্রয়কৃত চালের বস্তা ঢোকানোর প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, “আমাদের ডিজি মহোদয়ের একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা হলো, সব বস্তায় স্টেনসিল নিশ্চিত করা। কিন্তু এই গুদামের বস্তায় মিলের স্টেনসিল আমরা পাইনি। এটা বড় ধরনের অনিয়ম।”
এই কর্মকর্তা জানান, এই অনিয়মের ব্যাপারে তিনি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেবেন।
সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ১৬০ বস্তা চাল সরববরাহও করতে হবে বলে তিনি জানান।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দাবি, ‘ষড়যন্ত্র’
রাজশাহী সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) মাজেদুল ইসলাম মোটেও মানতে রাজি নন যে, অনুপযোগী চাল কেনা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এর পেছনে কোনো ‘ষড়যন্ত্র’ আছে।
তিনি বলেন, “এটা শুধু আমার বদনাম করার জন্য করা হয়েছে। আমি এখানে দায়িত্ব নেয়ার আগে এই অফিসে একটা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিলো, যারা দুর্নীতির মাধ্যমে অনেক কিছু করেছে। তারাই এখন ভালো চালকে খারাপ বলে চিহ্নিত করার জন্য এসব ষড়যন্ত্র করছে।”
মাজেদুল ইসলাম দাবি করেন, সেই ‘ষড়যন্ত্র’ সফল হলে আবারও রাজশাহী সদর খাদ্য গুদাম চাল সবরাহের ক্ষেত্রে ওই চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে।
যদিও এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। কেউ আমার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগও করেনি। তাই এই ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করা আমার জন্য সমীচীন হবে না।”